শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১

পরিণত চিংড়ি মজুদকরণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

পরিপক্ক চিংড়ি মজুদের পূর্বে ব্রুড চিংড়িকে অভ্যস্তকরণ করে নেয়া হয়। ব্লুড চিংড়িকে যথাযথভাবে অভ্যস্তকরণ না করে পুকুরে মজুদ করলে চিংড়ির বেঁচে থাকার হার হ্রাস পায়। এছাড়া চিংড়ির উৎপাদিত ডিমের সংখ্যাও হ্রাস পায়। তাই চিংড়ি মজুদকালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

Content added By

এ্যারেটর স্থাপন

বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে বাহিরের অক্সিজেন মিশ্রিত বাতাস পানির গভীরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে পানির ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার যন্ত্রের নাম এ্যারেটর। এ্যারেটর পুকুরের পরিবেশগত সামগ্রিক উন্নতির জন্য বড় ভুমিকা পালন করে থাকে।

একটি ভালো গুণসম্পন্ন এ্যারেটর নির্বাচনের জন্য যেসব সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:

  • কম শব্দ সৃষ্টি করে এমন এ্যারেটর 
  •  দীর্ঘ কর্মজীবন ও কম ওজন
  •  প্রতিস্থাপন ও সহজ কার্যপ্রণালী
  • উচ্চ অক্সিজেন স্থানান্তর ক্ষমতা
  • স্টেইনলেস টেকসই ফ্রেম

 চিংড়ি চাষের অগ্রগতির সাথে সাথে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও উন্নত হচ্ছে। একটি এয়ার পাম্প ট্যাংকের বাইরে থেকে বাতাস শুষে ট্যাংকের ভিতরে নিমজ্জিত যন্ত্রপাতিতে পাম্প করে। তাই সঠিক দিক এবং সঠিক চাপে বায়ু প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়ে একটি এয়ার পাম্পের আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের বর্ণনা দেওয়া হলো-

১. এয়ারলাইন টিউবিং- এয়ার পাম্প থেকে ট্যাংকের পানিতে নিমজ্জিত সরঞ্জামে বায়ু প্রবাহকে নির্দেশ করে ভালভ চেক করতে হবে। যদি পাম্প বন্ধ হয়ে যায় বা শক্তি হারায় তবে চিংড়ির ট্যাংক থেকে পানি বের হওয়াকে বাধা দেয়।

২. এয়ার ভালভ- এয়ার পাম্প থেকে ট্যাংকে আসা বায়ু প্রবাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

৩. টি স্প্রিটার- একটি এয়ারলাইনকে দু'টি গতিপথে বিভক্ত করে, একটি একক এয়ার পাম্পকে দু'টি ডিভাইস চালানোর অনুমতি দেয়।

৪. গ্যাং ভালভ- একটি এয়ার পাম্প থেকে চারটি ভিন্ন ট্যাংকে বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

 ৫. এয়ারলাইন হোল্ডার- ট্যাংকের ভিতরে বা বাইরে এয়ারলাইন টিউবিংকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে একটি সাকশন কাপ ব্যবহার করে। 

৬. এয়ারলাইন সংযোগকারী- দীর্ঘ দূরত্বে পৌঁছানোর জন্য এয়ারলাইন টিউবিংয়ের দু'টি টুকরো একসাথে সংযুক্ত করে।

এয়ার পাম্প, ট্যাংক ডিভাইস এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক উপকরণ কিনতে এবং এয়ার পাম্প স্থাপন করতে নিম্নের মৌলিক নির্দেশাবলী অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি-

১। এয়ার পাম্পটিকে ট্যাংকের বাইরে রাখা উচিত এবং তারপরে এয়ারলাইন টিউবিংটি সঠিক দৈর্ঘ্যে কেটে দিতে হবে যাতে এটি ট্যাংকের ভিতরে এর আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের সাথে বায়ু পাম্প সংযোগ করার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ হয়।

২। এয়ারলাইন টিউবিংয়ের এক প্রান্ত ট্যাংকের ভিতরের সরঞ্জামের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ডিভাইসটিকে ট্যাংকের ভিতরে রাখতে হবে। তারপর এয়ারলাইন টিউবিংয়ের অন্য প্রান্তটি এয়ার পাম্পের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

৩। স্পঞ্জ ফিল্টার এবং ট্যাংক ডিভাইসের মাঝখানে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় এয়ারলাইন টিউবিংটি কেটে এর মধ্যে চেক ভালভটি সংযুক্ত করতে হবে যাতে ফ্ল্যাপারসহ চেক ভালভের শেষ অংশ বায়ু পাম্পের মুখোমুখি হয়।

৪। যদি চেক ভালভটি পিছনের দিকে স্থাপন করা হয় তবে এয়ার পাম্প চালু করার সময় কোনও বায়ু প্রবাহিত হবে না, তাই চেক ভালভটির চারপাশে আলতোভাবে টোকা দিতে হবে।

৫। এয়ার পাম্পের পাওয়ার ক্যাবল দিয়ে একটি ড্রিপ লুপ তৈরি করতে হবে তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। অতঃপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্যাংকের ডিভাইস থেকে বুদবুদ পরিলক্ষিত হবে।

Content added By

এ্যারেটর হল বায়ু চলাচলের যন্ত্র যা পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রবীভূত গ্যাস (যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড) অপসারণের জন্য পানি এবং বায়ুকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে নিয়ে আসে এবং লোহা, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিকের মতো দ্রবীভূত ধাতুগুলিকে জারিত করে। চিংড়ি চাষিদের লক্ষ্য হল ঝুঁকি কমিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন এবং মুনাফা অর্জন করা। এ্যারেটর হলো পানির গুণগত মানের ব্যবস্থাপনা এবং অক্সিজেন ঘাটতি হ্রাসের জন্য সবচেয়ে দ্রুত সমাধান প্রক্রিয়া। এটি অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো রাসায়নিক পদার্থগুলিকে অপসারণ করে ফলে চিংড়ি চাষের পানির গুণগতমান উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।

এ্যারেটরের মূল উদ্দেশ্য হল অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং পানিতে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেওয়া। এ্যারেটর নির্বাচন করার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অক্সিজেন বিচ্ছুরণ। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বাগদা চিংড়ির বৃদ্ধি, বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এ্যারেটর অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পানির প্রাথমিক খাদ্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী চিংড়ির মতো প্রজাতির জন্য পানির নীচের স্তরে অক্সিজেন সরবরাহ করা আবশ্যক। এ্যারেটর ব্যবহারের ফলে স্রোতের বিপরীতে চিংড়ি সাঁতার কাটে। ফলে চিংড়ির শরীরে কোনো ময়লা বা ক্ষতিকর প্রাণী লেগে থাকতে পারে না। পানিতে অক্সিজেন মেশানো ও সরবরাহের ফলে খাদ্যের অপচয় কম হয়, পানির তলদেশ পরিষ্কার হয় এবং চিংড়ি রোগমুক্ত থাকে। 

Content added By

এ্যারেটরের প্রকারভেদ

কাজের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে বাজারে বিভিন্ন ধরনের এ্যারেটর পাওয়া যায়। সেগুলো হল:

ক) প্যাডেল হইল এ্যারেটর

খ) ফিস পন্ড এ্যারেটর 

গ) টারবাইন এ্যারেটর

ঘ) ডিফিউজার এ্যারেটর

ঙ) সাবমারসিবল পাম্প 

প্যাডেল হুইল এ্যারেটর পুকুরের উপরের স্তরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোটর-এর শক্তি ভেদে ২ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত পানির নিচে ডুবানো থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ আরপিএম এ এই হুইলগুলো ঘুরে থাকে। তবে বাণিজ্যিক প্যাডেলগুলো ৯০ আরপিএম এর মতো ঘুরে থাকে যেখান থেকে প্রতি অশ্বক্ষমতার (HP) জন্য ঘন্টায় ৩ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি হতে পারে। প্যাডেল হুইল এ্যারেটর এর অসুবিধা হল এ ধরনের এ্যারেটর পুকুরের তলদেশে তেমন কাজ করতে পারে না। আমাদের দেশের পুকুরের পরিবেশগত দিক বিবেচনা করলে সাবমারসিবল পাম্প সব থেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি পানির তলদেশ থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যখন উপরের স্তরে আসে তখন প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন পানিতে মেশাতে মেশাতে আসে এবং অধিক অক্সিজেনের কারণে পুকুরের সমগ্র পরিবেশের উন্নতি ঘটে।

চিত্র-৫.২ (ক) এ্যারেটর পাম্প, (খ) প্যাডেল হইল এ্যারেটর

Content added By

এ্যারেটরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন

বর্তমানে বেশিরভাগ চিংড়ি চাষিদের কাছে কম বিদ্যুৎ খরচের অত্যন্ত দক্ষ বৈদ্যুতিক মোটরসহ এ্যারেটর রয়েছে। সমস্ত এ্যারেটর সিস্টের এর জন্য একটি নির্দিষ্ট শক্তির উৎস প্রয়োজন। হ্যাচারি বিদ্যুতের লাইনের কাছাকাছি থাকলে খুব ভালো হয়। প্রতি ৩০০- ৫০০ কেজি অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ১ অর্থক্ষমতার (HP) এ্যারেটর প্রয়োজন। এক অশ্বক্ষমতা বিশিষ্ট একটি এ্যারেটর এক ফটা চালু থাকলে প্রায় ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। হেন্টর প্রতি চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতি হেক্টরে বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাৰে।

Content added By

চিংড়ি অভ্যস্তকরণ

ব্রুডস্টক ব্যবস্থাপনার জন্য অভ্যস্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। ব্রুড চিংড়ি পরিবহণের পর যে পরিবেশে রাখা হবে তার নিয়ামকগুলোকে সর্বোত্তম রাখা উচিত যাকে বাগদা চিংড়ির সর্বোচ্চ বেঁচে থাকার হার নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে চিংড়ির পরিপককরণ এবং উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের অভ্যন্তকরণের ফলে চিংড়ির টেকসই উৎপাদন, উৎপাদিত ডিমের সংখ্যা ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও চিংড়ির পরিপক্ষতা ও প্রজননের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যদি অভান্তকরণ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পালন না করা হয় তাহলে চিংড়ির উর্বরতার হার হ্রাস পেতে পারে।

Content added By
Promotion